‘ভেবেছেন চোখ রাঙিয়ে গোটা ইন্ডাস্ট্রি নিয়ন্ত্রণে রাখবেন’, ফেডারেশনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক পরম, অনির্বাণরা

0

এন্টারটেইনমেন্ট ডেস্ক: গত বছর জুলাই মাসের ঘটনা। পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া থেকে ফেডারেশন বনাম পরিচালক গিল্ডের দ্বন্দ্বে সরগরম হয় টলিউড ইন্ডাস্ট্রি। শুধু রাহুলই নয়। একই সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় থেকে শুরু করে জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, শ্রীজিৎ রায় এমনকি সম্প্রতি সুদেষ্ণা রায়কেও। তবে কাজ বন্ধ হলে শুধুই কি পরিচালকদের ক্ষতি? মাশুল গুনতে হয় টেকনিশিয়ানদেরও। সম্প্রতি এই প্রসঙ্গেই সমাজমাধ্যমে ফের সরব হলেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরী এবং সুদেষ্ণা রায়। ফেডারেশনের বিরুদ্ধে আবারও একাধিক অভিযোগ সামনে আনলেন তাঁরা। পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে চলেছে তাঁদের?

গত বছর জুলাই মাস থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত যা যা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে, সেই কথাই আবারও একবার তুলে ধরলেন পরিচালকরা। ইন্দ্রনীল বলেন, “কোনও টেকনিশিয়ান কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন যে তাঁরা নিজের ইচ্ছেতে কাজ বন্ধ করেছেন? কোনও কাজে যখন কোনও টেকনিশিয়ান আসেন না, পুরো টলিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রি জানে এর অর্থ। উপর থেকে চাপ দেওয়া হয় টেকনিশিয়ানদের। তাঁদের রোজগার আটকে দিয়ে ফেডারেশন কি টেকনিশিয়ানদের স্বার্থে কাজ করে?”

এই প্রসঙ্গে পরমব্রত বলেন, “ফেডারেশন নিজেরা নিয়ম বানিয়েছে। বাইরের কোনও প্রযোজক খুব বাধ্য না হলে কলকাতায় আসতে চান না।” সহমত বিদুলা ভট্টাচার্যেরও। তিনি বলেন, “অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানরা জানেন আগে বাইরের কত শুটিং এখানে হত। তাঁরা নিজেরাও বুঝতে পারছেন তাঁদের কাজ কতটা কমে গিয়েছে। এখন কটা ছবি হয়? ২০২৪ এ ৩৬টি ছবি হয়েছে ইন্ডাস্ট্রিতে। যা বিগত ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।” ইন্দ্রনীলের মতে, ঠিক এই কারণেই বেড়ে গিয়েছে ছবির তৈরির খরচ। বাজেটের স্বার্থে কমিয়ে আনতে হচ্ছে শুটিংয়ের দিন। কমে যাচ্ছে বাংলা ছবির দর্শক।

পরিচালকদের অভিযোগ, তাঁদের সঙ্গে বরাবরই আলোচনা এড়িয়ে গিয়েছে ফেডারেশন। পরমের মতে, ‘ফেডারেশন ভেবেছে কেবল চোখ রাঙিয়ে গোটা ইন্ডাস্ট্রিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনবেন।” একসময়ে বাধ্য হয়ে মহামান্য হাইকোর্টেরও দ্বারস্থ হয়েছিলেন পরিচালকেরা।

যে ১৫জন পরিচালক উচ্চআদালতে আবেদন করেছিলেন, কোর্টের রায় অনুযায়ী, কোনওভাবে তাঁদের কাজ করার অধিকার খর্ব করা যাবে না। অথচ ঠিক সেটাই হয়েছে। অনির্বাণের বক্তব্য, “ফেডারেশন বলেছে, টেকনিশিয়ানরা নাকি নিজে থেকেই কাজে আসে না। সবাই জানে এই কথাটা মিথ্যে। টেকনিশিয়ানদের কাজে যোগ না দিতে পারার দায়িত্ব অবশ্যই তাঁদের গিল্ডের সম্পাদকদের উপর বর্তায়।” ইন্দ্রনীল বলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাঁদের এই কাজটি সম্পর্কে আমরা উচ্চ আদালতকে জানাব। আমরা আশা করব তাঁরা আদালতে গিয়ে বিচারককে বোঝাতে পারবেন যে কোন যুক্তিতে অলিখিত নির্দেশে তাঁরা এতজন টেকনিশিয়ানকে কাজে আসতে দিলেন না।”

পরিচালকদের সংগঠনের অভিযোগ ছিল, ফেডারেশন ইউনিক আইডি না–দেওয়ায় পরিচালকরা কাজ করতে পারছেন না। হাইকোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, ইউনিক কার্ড না থাকলেও পরিচালকদের কাজ করার অধিকার ক্ষুণ্ণ হবে না। কারণ, ফেডারেশনের আইনজীবী আদালতে নিজেই স্বীকার করেছেন যে তাঁদের তৈরি করা ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ ২০১২ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত বলবৎ ছিল। কিন্তু তারপরে নয়। অর্থাৎ টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে ফেডারেশনের তৈরি করা কোনও ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ এবং তার ভিত্তিতে তৈরি ইউনিক কার্ড, কোনওটাই বৈধ নয়। পরমব্রত বলেন, “আমরা কিন্তু ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ তুলে দেওয়ার জন্য পিটিশন করিনি। প্রশাসনকে বলতে চেয়েছিলাম যে আমরা আমাদের পছন্দের টেকনিশিয়ানদের সঙ্গে কাজ করতে পারছি না। আমাদের ব্লক করা হচ্ছে যেহেতু আমরা কিছু প্রশ্ন তুলেছি।” কিংশুক দের বক্তব্য, “ফেডারেশন ‘ডিএইআই’-এর মেডিক্লেম বন্ধ করে দিয়েছে। আদালত স্পষ্টভাবে জানিয়েছে মেডিক্লেম দেবে সরকার। এখানে ফেডারেশনের কোনও ভূমিকা নেই।” অনির্বাণ বলেন, “আদালতের নির্দেশ আমরা যেন আমাদের পয়েন্টগুলো সাজিয়ে দফতরের সচিবকে চিঠি লিখি। তিনি সমস্ত পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আদালতের কাছে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট দেবে। যার ভিত্তিতে আদালত তার পরবর্তী পদক্ষেপ করবে। এই রিপোর্ট হাতে আসলেই বোঝা যাবে আমাদের দাবিগুলি ন্যায়সঙ্গত কি না।”

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *