‘আমায় নিয়ে ভাবিস না, খেলে যা!’ আকাশ দীপকে বলেছিল ক্যান্সার আক্রান্ত দিদি
স্পোর্টস ডেস্ক: ঘাতক ক্যান্সার। গত দু’মাস শুধু নার্সিংহোম আর বাড়ি। জীবনের আয়ু ক্ষয় হচ্ছে। তবু ভাইকে ইংল্যান্ডগামী বিমানে তুলে দিতে এসে বিমানবন্দরে হাতে হাত রেখে দিদি স্রেফ একটাই কথা বলেছিলেন, ‘আমার ক্যান্সার নিয়ে ভাবিস না। দেশের হয়ে ভালভাবে খেলে যা!’ এ’কথা আকাশ দীপের দিদি জ্যোতির। অখণ্ডজ্যোতি সিং, এজবাস্টনে বল হাতে নায়ক বঙ্গপেসার আকাশ দীপের দিদি। যে আকাশ দীপ এক ম্যাচে দশ উইকেট নিয়েছেন। এক ইনিংসে ফাইফার করেছেন। দেশকে জিতিয়েছেন। সেই আকাশ দীপ ম্যাচ শেষেই চোখ ছলছল অবস্থায় বলেছিলেন, ‘এটা আমি কাউকেই বলিনি। আমার বড় দিদি গত দু’মাস ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত’। তারপর অকপটে বলেছেন, ‘যখনই বল করতাম, তখনই তোমার মুখটা ভেসে উঠত। আমি তোমাকে শুধু একটু খুশি করতে চেয়েছিলাম। আমরা সবাই তোমার সঙ্গে আছি।’
গত দু’মাস ঝড় যাচ্ছে আকাশ দীপের ব্যক্তিগত জীবনে। বাবাকে হারিয়েছেন, দাদাকে হারিয়েছেন, জীবনের অনেক লড়াই লড়েছেন, এরপর দিদিকে কিছুতেই হারাতে চান না বাংলার এই পেসার। দেশের জার্সিতে লড়াইয়ের পাশাপাশি নিজের সঙ্গে এই লড়াইয়ের গল্পটাই আকাশ দীপকে আলাদা করে দেয়। আইপিএল খেলছেন যখন, তখন অখণ্ডজ্যোতির ক্যান্সার ধরা পড়ে। তারপর থেকে আকাশ দীপের ঘুম ছুটেছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের আকাশ দীপের দিদি বলেছেন, ‘আকাশ যে দশ উইকেট নিল, এটা দেশের জন্য গর্বের। কিন্তু আমি জানতাম না আকাশ এত কিছু জানিয়েছে। আমার কোনও আইডিয়াই ছিল না। আসলে আমরা কেউই ক্যানসারের কথা বাইরের দুনিয়াকে জানানোর জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। তবে যেভাবে আবেগপ্রবণ হয়ে ও আমার কথা বলেছে, নিজের সাফল্য আমায় উৎসর্গ করেছে—এটা খুব বড় বিষয়। এটাই প্রমাণ করে আকাশ পরিবারকে কতটা ভালবাসে। আসলে আমি ওর সবচেয়ে কাছের মানুষ!’
এরপর অখণ্ডজ্যোতি সিং বলেই চলেন, ‘ম্যাচ শেষ হওয়ার পর, আমরা ভিডিও কলে দুবার কথা বলেছিলাম। তারপর ভোর ৫টায় তার সাথে কথা বলেছিলাম। আকাশ বলেছিল যে তোমার চিন্তা করার দরকার নেই এবং পুরো দেশ আমাদের সাথে আছে। খুব কমই কেউ এমন ভাই পাবে। সে আমাদের অনেক সাহায্য করে। সে আমাদের সাথে কথা না বলে কিছুই করে না। সে পরিবারকে সবকিছু বলে। বাবা এবং ভাই আর এই পৃথিবীতে নেই, এখন সে পুরো ঘর চালায়। আমরা তিন ভাই এবং তিন বোন, একজন মারা গেছে। আকাশ সবার ছোট। ক্যান্সারের সময় সে আমাদের সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছিল’।