প্রয়াত পর্দার কর্ণ পঙ্কজ ধীর! কিন্তু জানেন কি শুরুতে অর্জুন হিসেবে তাঁকে বেছে নিয়েছিলেন বি আর চোপড়া

বলিউড জুড়ে আজ শোকের ছায়া, প্রয়াত প্রবীণ অভিনেতা পঙ্কজ ধীর। বিআর চোপড়ার মহাভারতের কর্ণ। কিন্তু জানলে অবাক হবেন ‘কর্ণ’ নয় বরং অর্জুন হাওয়ার কথা ছিল তাঁর? জেনে নিন অভিনেতার সেই অজানা গল্প।
বিআর চোপড়ার মহাভারত যে কতখানি জনপ্রিয় তা আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। আর সেই মহাভারতেই কর্ণের চরিত্রে নজর কেড়েছিলেন অভিনেতা। তবে কর্ণ নয়, প্রথমে অর্জুনের ভূমিকা অভিনয়ের জন্য পঙ্কজ ধীরকে বেছে নিয়েছিলেন পরিচালক। কিন্তু এর পাশাপাশি রেখেছিলেন এক বিশেষ শর্ত। অর্জুনের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য অনেকেই হয়তো এই শর্তে রাজিও হয়ে যেতেন সহজে। কিন্তু নিজের জায়গায় অনড় ছিলেন পঙ্কজ। তাই সেই সময় পরিচালকের সঙ্গে তাঁর মনোমালিন্যও হয়েছিল। বি আর চোপড়া তাঁকে অফিস থেকে বের করে দিয়েছিলেন।
নিশ্চয়ই ভাবছেন কী সেই শর্ত? আসলে তাঁকে গোঁফ কামাতে বলেছিলেন পরিচালক। আর সেই শর্তই তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। গত বছর এক সাক্ষাৎকারে এই মজার গল্পও ভাগ করে নিয়েছিলেন প্রয়াত অভিনেতা। তিনি বলেছিলেন, “আমি যখন অডিশন দিয়েছিলাম, তখন চিত্রনাট্যকার রাহি মাসুম রাজা, ভ্রিং টুপকারি সাহেব এবং পণ্ডিত নরেন্দ্র শর্মা একটি প্যানেল তৈরি করেছিলেন। তাঁরা সকলেই ভেবেছিলেন যে আমি অর্জুনের ভূমিকায় মানানসই। আমি চুক্তিতেও সই করেছিলাম। তারপর বিআর চোপড়া আমাকে ফোন করে বললেন যে, যেহেতু আমাকে বৃহন্নলা (অর্জুনের নপুংসক রূপ) চরিত্রেও অভিনয় করতে হবে। তার জন্য আমাকে আমার গোঁফ কামাতে হবে। এই কথা শুনে আমি বলেছিলাম, ‘না, আমি এটা করতে পারব না।’ আমি তাকে বললাম যে আমার মুখের গঠন এতটাই খারাপ যে, আমি যদি গোঁফ কামাই, তাহলে আমাকে ভাল লাগবে না। তিনি আমাকে বললেন, ‘তুমি কী অভিনেতা? গোঁফের জন্য তুমি এত বড় একটা চরিত্র ছেড়ে দিচ্ছ! আমি এটা বুঝতে পারছি না।’ “
তবে এতটুকুতেই থেমে যাননি পরিচালক। এরপর নাকি অভিনেতাকে বি আর চোপড়া তাঁর অফিস থেকে বেরও করে দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে যখন তিনি সূর্য ও কুন্তীর পুত্র কর্ণের ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য উপযুক্ত অভিনেতা পাচ্ছিলেন না, তখন ফের পঙ্কজকে ওই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য অনুরোধ করেন। পঙ্কজের কথায়, “এটা আমার বড় বোকামি ছিল, কিন্তু সেই সময় আমি কেবল এতটুকুই বুঝতে পেরেছিলাম। চোপড়া সাহেব আমাকে বলেছিলেন, ‘এই দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাও এবং আর কখনও এসো না।’ তিনি আমাকে ওঁর অফিস থেকে বের করে দিয়েছিলেন একপ্রকার। আমার চুক্তি ভেঙে যায়। ছয় মাস ধরে আমি ঘুরে ঘুরে ঘুরে ডাবিং করতে থাকি। তারপর চোপড়া স্যার আমাকে আবার ফোন করেন। এটাকেই আমি নিয়তি বলি। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন যে, আমি কর্ণের চরিত্রে অভিনয় করতে পারব কিনা? তারপরও আমি ওঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘স্যার, আমাকে আমার গোঁফ কামাতে হবে না তো?’ তিনি বলেছিলেন ‘না’। ভাগ্যিস কর্ণের ভূমিকা পেয়েছিলাম।”
তবে কেবল মহাভারত নয়, অভিনেতার ঝুলিতে রয়েছে ‘চন্দ্রকান্তা’, ‘যুগ’, ‘দেব কা দেব মহাদেব’-এর মতো ধারাবাহিক। পাশাপাশি অভিনয় করেছেন সলমন, শাহরুখ, অক্ষয়ের সঙ্গেও। ‘সড়ক’, ‘বাদশা‘, সৌগন্ধ’, ‘সনম বেওয়াফা’, ‘টারজান’, ‘তুমকো না ভুল পায়েঙ্গে’, ‘সোলজার’-সহ বহু ছবিতে। বুধবার মুম্বইয়ের ভিলে পার্লে পবন হংসের পাশে, তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়।