মনের কথা পড়ে ফেলে গড়লেন নজির, ‘সেরা জাদুকর’- এর খেতাব ভারতের সুহানির

0

ট্রেডিং: ভাবা যায়, কেউ একজন কারোর মনের কথা হুবহু বলে দিচ্ছেন! অথবা কারোর ফোনের পাসওয়ার্ড ফাঁস করে দিচ্ছেন অবলীলায়! এমনটা শুনতে গল্পের মতো মনে হলেও, এটাই করে দেখিয়েছেন ভারতের প্রতিভাবান মানসিকতাবিদ অর্থাৎ mentalist সুহানি শাহ। সম্প্রতি ইতালিতে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ ম্যাজিক সোসাইটিজ (FISM) ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি জিতে নিয়েছেন ‘বেস্ট ম্যাজিক ক্রিয়েটর’-এর খেতাব, যা ভারতের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। তিনিই প্রথম ভারতীয় নারী মেন্টালিস্ট যিনি এই সম্মান অর্জন করলেন।


উদয়পুরের এক মারওয়ারি পরিবারে ১৯৯০ সালের ২৯ জানুয়ারি জন্ম সুহানির। মাত্র ছয় বছর বয়সেই তিনি নাকি বাবা-মাকে বলেছিলেন যে তিনি জাদুকর হতে চান! সেই সময় ভারতীয় মেয়েদের মধ্যে এমন স্বপ্ন দেখা ছিল ভীষণ বিরল। মজার বিষয় হলো, তাঁর বাবা নিজেও একজন জাদুকর ছিলেন এবং তিনিই হয়ে ওঠেন সুহানির প্রথম সমর্থক ও গুরু।

সাত বছর বয়সে, ১৯৯৭ সালের অক্টোবরে আহমেদাবাদে সুহানি তাঁর প্রথম লাইভ জাদু প্রদর্শনী করেন। তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। স্কুল ছেড়ে, জাদুকর হয়ে দেশ ঘুরে বেড়ানো শুরু। বই নয়, ছিল মঞ্চ তাঁর পাঠশালা।

স্টেজে পারফর্ম করা ছাড়াও সুহানি একজন প্রশিক্ষিত হিপনোথেরাপিস্ট। একসময় গোয়ায় তাঁর একটি হিপনোথেরাপি সেন্টারও ছিল, যেখানে তিনি উদ্বেগ, মানসিক চাপ এবং ট্রমা মোকাবিলায় মানুষকে সাহায্য করতেন। তবে, স্টেজে পারফর্ম করার উত্তেজনাকে মিস করায় তিনি পরে সেই সেন্টার বন্ধ করে দেন।

তিনি ‘আনলিশ ইওর ইনার পাওয়ার’ নামে একটি বইও লিখেছেন, যেখানে তিনি আত্মবিশ্বাস তৈরি, আত্ম-সন্দেহ মোকাবিলা এবং একটি পরিপূর্ণ জীবন গড়ার বিষয়ে তাঁর জীবন দর্শন ও অন্তর্দৃষ্টি শেয়ার করেছেন। সুহানি শাহকে ভারতে মানসিকতার শিল্পকে আধুনিকীকরণ ও জনপ্রিয় করার পথপ্রদর্শক হিসেবে মানা হয়। কোনো জাদুর কাঠি বা তাসের ডেক ছাড়াই তিনি এমন জাদু দেখান যা মন পড়তে পারে, চিন্তা ব্যাখ্যা করতে পারে এবং তীক্ষ্ম মনস্তাত্ত্বিক অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দর্শকদের স্তব্ধ করে দেয়।

FISM-এ তাঁর ঐতিহাসিক জয়ের পর, সুহানি নতুন প্রজন্মের ভারতীয় জাদুকর এবং মানসিকতাবিদদের অর্থাৎ মেন্টালিজ্ম অনুপ্রাণিত করে চলেছেন। তিনি নিয়মিত তাঁর লাইভ শো নিয়ে সফর করেন, মানসিকতা বিষয়ক কর্মশালা আয়োজন করেন এবং ইউটিউব ও ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় রয়েছেন, যেখানে তিনি তাঁর শিল্পের অন্তর্দৃষ্টি শেয়ার করেন।

FISM পুরস্কারকে জাদুর জগতের ‘অস্কার’ হিসাবে বিবেচনা করা হয় – এবং এখন ভারত তার নিজস্ব স্থান করে নিয়েছে! সুহানি শাহ নিজেই বলেছেন, “এটি কেবল একটি ব্যক্তিগত জয় নয়, এটি ভারতের মানসিকতা, সৃজনশীলতা এবং সাংস্কৃতিক আত্মার উদযাপন।”

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *