সেলেবদের প্রিয় খেলনা থেকে ‘আতঙ্ক’, এক ঝলকে জেনে নিন ‘লাবুবু’র ইতিহাস

0

ট্রেডিং: বর্তমানে যে পুতুলটি সেলিব্রিটিদের ব্যাগ এবং ঘরে রাজত্ব করছে, তা নিয়ে কিন্তু সম্প্রতি এক বিতর্ক দানা বাঁধছে। জনপ্রিয়তার শিখরে থাকা সত্ত্বেও, কেন এই খেলনা হঠাৎ করে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তা নিয়েই আলোচনা।

এই লাবুবু কী? লাবুবু হল এক চরিত্র যা ২০১৫ সালে বিখ্যাত শিল্পী কেসিং লাং-এর হাতে তৈরি হয়েছে। লম্বা কান আর ধারালো দাঁতওয়ালা এই ছোট্ট, আদুরে দানবটি আসলে নর্ডিক মিথোলজির দ্বারা অনুপ্রাণিত। তার রোমাঞ্চকর অভিযানগুলিকে ‘দ্য মনস্টারস’ নামক বইয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই খেলনাটি বর্তমানে সারা বিশ্বের মানুষের মন জয় করছে, এবং বেশ ট্রেন্ডিং।
লাবুবুর জনপ্রিয়তা সত্যিই চোখে পড়ার মতো! হলিউড তারকা যেমন রিহানা, লিসা, এবং কিম কারদাশিয়ানরা তাদের ব্যাগে এই পুটল নিয়ে ক্যামেরাবন্দী হওয়ার পর থেকেই লাবুবু ক্রেজ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। শুধু হলিউডেই নয়, বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রশ্মিকা মন্দনা, উর্বশী রাউতেলা, এবং অনন্যা পান্ডের মতো তারকারাও তাদের ব্যাগে এই লাবুবুকে নিয়ে ঘুরছেন। বাংলায়ও লাবুবু-প্রেমের সাক্ষী হতে দেখা যাচ্ছে; সম্প্রতি মনামী ঘোষকে একটি ফিল্ম স্ক্রিনিংয়ে লাবুবু টি-শার্ট পরে দেখা গিয়েছে। এই ট্রেন্ড এতটাই ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে যে ‘Labubu doll’ গুগল ট্রেন্ডসে ২.১ মিলিয়ন সার্চে পৌঁছে যাচ্ছে, যা এর অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তার প্রমাণ।
সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল, কিন্তু হঠাৎ করেই এক বিতর্ক লাবুবুকে ঘিরে ধরে। সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে লাবুবুর ছবির সাথে বাদামী রঙের পাজুজু দানবের একটি ছবি জুড়ে দেওয়া হয়েছে। পাজুজু একটি মেসোপটেমিয়ান পুরাণের এক ভয়ঙ্কর দানব, যার উল্লেখ জনপ্রিয় ভূতের ছবি ‘দ্য এক্সরসিস্ট’-এ আছে। এই ভিডিওটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই লাবুবুর মিষ্টি ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
‘সিম্পসনস’-এর বিতর্কিত ক্লিপ এবং আতঙ্ক
বিতর্কের আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ে যখন ‘সিম্পসনস’-এর একটি ক্লিপ ভাইরাল হয়। এই ক্লিপে দেখানো হচ্ছে যে, মার্জ ভুল করে বাচ্চাকে একটি পাজুজু খেলনা উপহার দিচ্ছেন। এই ভিডিওটি দেখার পর থেকে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে মানুষের মধ্যে। অনেকেই লাবুবু পুতুলকে পাজুজু দানবের প্রতীক মনে করে তাদের লাবুবু পুতুলগুলো নষ্ট করে ফেলছেন। এর ফলে ষড়যন্ত্রমূলক এবং ভিত্তিহীন তথ্যগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, যা মানুষের মধ্যে আরও ভয় তৈরি করছে।
লাবুবুর নির্মাতা পপ মার্ট স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, লাবুবু দুষ্টুমি করে ঠিকই, কিন্তু সে আসলে খুব মিষ্টি স্বভাবের একটি চরিত্র, কোনোভাবেই সে দানব নয়। এছাড়া, স্নোপস নামের একটি তথ্য যাচাইকারী ওয়েবসাইটও স্পষ্ট করেছে যে, লাবুবু এবং পাজুজুর মধ্যে দৃশ্যত কোনো মিল নেই। তাদের আকার, রঙ, এবং বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ আলাদা।
লাবুবুর অনুপ্রেরণা: রূপকথা, দুঃস্বপ্ন নয়
এছাড়াও, ব্রিটানিকা এনসাইক্লোপিডিয়া জানাচ্ছে যে, পাজুজু সম্পূর্ণভাবে খল চরিত্র ছিল না; কিছু ক্ষেত্রে তাকে রক্ষাকারী হিসেবেও দেখা হত। অর্থাৎ, পাজুজুর নেতিবাচক চিত্রায়ন কিছুটা একপেশে। লাবুবুর স্রষ্টা শিল্পী কেসিং লাং নিজেই জানিয়েছেন যে, লাবুবুর অনুপ্রেরণা এসেছে রূপকথা থেকে, কোনো দুঃস্বপ্ন থেকে নয়। তাই, লাবুবুকে ঘিরে যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে, তার বেশিরভাগটাই ভিত্তিহীন এবং গুজব।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed