২৭ বছর পর ঘুচল চোকার্স তকমা, বিশ্ব টেস্টের সিংহাসনে দক্ষিণ আফ্রিকা

অবশেষে বদনাম মুছল প্রোটিয়াদের। টেম্বা বাভুমারা মুছে দিলেন চোকার্স তকমাও। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে অবশেষে ‘আমরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন’ বলার অধিকার পেল দক্ষিণ আফ্রিকা। (বর্ণবিদ্বেষ) কারণে ২১ বছর নির্বাসনে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা ফিরে এসে ১৯৯৮ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছিল বটে, কিন্তু বিশ্বক্রিকেটে কৌলিন্য পায়নি। উল্টে ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল থেকে জুড়ে গিয়েছে ‘চোকার্স’ তকমা। একের পর এক বিশ্বকাপ গেছে, আর তকমাটা যেন আরও এঁটে বসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার গায়ে। নিন্দুকরা বলত, বড় ম্যাচের চাপ নিতে পারে না তারা। কেপলার ওয়েসেলস, হ্যান্সি ক্রোনিয়ে, গ্যারি কার্স্টেন, অ্যালান ডোনাল্ড, শন পোলক, জ্যাক ক্যালিস, গ্রেম স্মিথ, এবি ডি ভিলিয়ার্সেরা সেই তকমা মুছতে পারেননি। তা ঘোচালেন টেম্বা বাভুমা, এডেন মার্করাম, কাগিসো রাবাদারা।

প্রথম ইনিংসে ১৩৮ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার পর ঘুরে দাঁড়ানোর দারুণ গল্প লিখেই টেস্টে বিশ্বসেরা হলো দক্ষিণ আফ্রিকা। চতুর্থ ইনিংসে ২৮২ রান করে জেতা সহজ কথা নয় টেস্ট ক্রিকেটে। বিশেষ করে যে দল ১৩৮ রানে প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়ে যায়, তাদের সামনে চতুর্থ ইনিংসে ২৮২ রানের লক্ষ্য, সত্যিই বিশাল একটা ব্যাপার। কিন্তু সেই অসম্ভবটাই সহজ করে দিলেন এডেন মার্করাম- টেম্বা বাভুমা।১৪৮ বছরের ইতিহাসে ২৮২ ও এর বেশি রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে জয়ের উদাহরণ ছিল মাত্র ৫০টি। তারমধ্যে লর্ডসে তো মাত্র দুবার। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ২১২ রান তোলে। জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা অলআউট হয় ১৩৮ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া তোলে ২০৭ রান। এরপর মার্করাম-বাভুমা জুটি দক্ষিণ আফ্রিকাকে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে। ২০৭ বলে ১৩৬ রানের অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেললেন মার্করাম। টেস্ট ক্রিকেটে তো ৪০০ রানের ইনিংসও আছে। ৩০০ কিংবা ৩০০ প্লাস ইনিংস আছে অনেক। ম্যাচ জেতানো অনেক ইনিংসও আছে; কিন্তু এডেন মার্করামের এই ১৩৬ রানের ইনিংসটা স্রেফ ইতিহাস তৈরি করে দিল।

সেইসঙ্গে অবশ্য টেম্বা বাভুমার নামও করতে হয়। দু’জনের কেউই ম্যাচ জিতিয়ে ফিরতে পারেননি। বাভুমার সঙ্গে তাঁর ১৪৭ রানের চতুর্থ উইকেট জুটিই মূলত ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয় অস্ট্রেলিয়াকে। চতুর্থ দিন সকালে বাভুমা ব্যক্তিগত ৬৬ রানের মাথায় আউট হয়ে যান। শেষ পর্যন্ত ডেভিড বেডিংহ্যাম ২১ এবং কাইল ভেরাইনি ৪ রান করে অপরাজিত থাকেন। কাইল ভেরেইনা জয়সূচক রানটি নিতেই উল্লাস মেতে উঠল দক্ষিণ আফ্রিকার ড্রেসিংরুম। কেঁদে ফেলেন ক্রিকেটাররা। কাইল ভেরেইনা জয়সূচক রানটি নিতেই উল্লাস মেতে উঠল দক্ষিণ আফ্রিকার ড্রেসিংরুম। বিশ্বকাপে সেমিফাইনালই সর্বোচ্চ দৌড় ছিল প্রোটিয়াদের। সেই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফাইনালে উঠেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু ‘চোকার্স’ তকমা ঘোচাতে পারেনি। বিশ্ব ক্রিকেট টুর্নামেন্টে ১৪টি নকআউট ম্যাচে হারা দক্ষিণ আফ্রিকা তাই প্রথমবার ‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন’ হল বলাই যায়।