সিরিয়াল বাড়াতে গিয়ে মেরে দিল বা কূটকাচালি দেখাল… টেলি সম্মান অনুষ্ঠানে বললেন মুখ্যমন্ত্রী

টেলিভিশন শুধু বিনোদন নয়, সামাজিক চেতনার দর্পণও! টেলিভিশনের ধারাবাহিকের মাধ্যমে সামাজিক চেতনা গড়ে তোলার বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার আলিপুরের ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে এ বছরের টেলি সম্মান পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
সামাজিক চেতনা গড়ে তোলার জন্য বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে ছোট পর্দার মাধ্যমে তুলে ধরার আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘টেলিভিশনের সবচেয়ে বড় কাজ হোক মানবিক ও সামাজিক চেতনা তৈরি করা ও সুশিক্ষা দেওয়া। নতুন প্রজন্ম আমাদের ইতিহাস জানতে পারছে না। হয়তো এটা আমাদেরই দোষ। কিছু কিছু জিনিসের মধ্যে দিয়ে আমাদের সামাজিক চেতনা, ইতিহাসকে তুলে ধরতে হবে।’ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, এখন অনেক বিষয়ের ওপর ধারাবাহিক হচ্ছে , যা আগে ভাবা যেত না। বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলার মাটি নবজাগরণের জন্ম দিয়েছে। এই মাটিকে আমাদের ভালবাসতে হবে। এই মাটিকে চেনানোর জন্যই আমি সামাজিক চেতনার কথা বলছি।’ শিল্পী ও কলাকুশলীদের অনুপ্রেরণা জুগিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘টেলিভিশন হচ্ছে আমাদের হৃদয়ের দর্পণ। সমাজশিক্ষা, সমাজের আলোড়ন, ভাষা ও সঙ্গীতের সংকলন, সব মিলিয়ে এই জগৎ মানুষের বিনোদনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।’
এ দিন হাজির ছিলেন ছোট ও বড় পর্দার চেনা মুখ। ছোট পর্দার ধারাবাহিকের বিভিন্ন বিভাগে অভিনেতা-অভিনেত্রী ও কলাকুশলীদের পুরস্কার প্রদান করেন মুখ্যমন্ত্রী। লাইফ-টাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় লীনা গঙ্গোপাধ্যায়কে। মরোণোত্তর বিশেষ কৃতি সম্মান পান বাসন্তী চট্টোপাধ্যায়। সবচেয়ে জনপ্রিয় সিরিয়ালের পুরস্কার পায় চিরসখা। তুই আমার হিরো-র শাক্যজিৎ-এর ভূমিকায় অভিনয় করে সেরা অভিনেতা হন রুবেল দাস। শুভবিবাহ-র সুধার চরিত্রে অভিনয় করে সোনামণি সাহা হন সেরা অভিনেত্রী। পুরস্কার পেয়েছেন তাঁর ‘ঘনিষ্ট বন্ধু’ প্রতীকও। সেরা সহ অভিনেত্রী জগদ্ধাত্রীর কৌশিকীর চরিত্রে রূপসা চক্রবর্তী, সেরা সহ অভিনেতা ‘পরিণীতা’-র গোপাল – দ্রোণ মুখোপাধ্যায়। সেরা পরিবারের পুরস্কারও তাঁদের ঝুলিতে। ‘কনে দেখা আলো’য় সেরা জুটি সাইনা চট্টোপাধ্যায়-সোমরাজ মাইতি। সেরা নন-ফিকশন অনুষ্ঠান দিদি নম্বর ১। সেরা সঞ্চালকও হন রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় । সেরা শিশু শিল্পী হন পরশুরামের পিকু আয়ুশ্ৰী মুখোপাধ্যায় । এছাড়াও একাধিক বিভাগে পুরস্কৃত করা হয় সেরাদের। জোয়ার ভাটা থেকে সেরা জুটি উজি-নিশা আরাত্রিকা, শ্রুতি। পুরস্কার পেয়েছেন ‘গীতা এল এল বি’র হিয়া, ‘ফুলকি’ দিব্যাণী , শন বন্দ্যোপাধ্যায়, দিতি প্রিয়া রায় সহ আরও অনেকে।
এই অনুষ্ঠানের সূচনায় রাজ্যের নানান সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে সংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়। ধারাবাহিকের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের বিপুল সুযোগ তৈরি হয় বলে মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘সব থেকে বড় কাজ যেটা আপনারা করেন সেটা হল কর্মের প্লাবন তৈরি হয়। এটা খুব বড় কাজ। কলাকূশলীরাও অনেক কাজ করেন। আপনাদের কোন ছুটি নেই। উৎসবের দিনেও আপনাদের কাজ করে যেতে হয়।’ মুখ্যমন্ত্রী নিজেও সিরিয়াল দেখেন। তাঁর কথায়, ‘আমিও সিরিয়াল দেখি। কখনো কখনো সিরিয়াল বাড়াতে গিয়ে কাউকে হয়তো মেরে দিল। অথবা কিছু কূটকচালি দেখাল। কেউ ইতিবাচক অথবা কেউ নেতিবাচক। সবই ভালো, টিআরপিও বাড়াতে হবে।’
