১৯৮৩ সালে কপিলদেব, ২০২৫ সালে হরমনপ্রীত, জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসনে প্রথমবার ভারতীয় মেয়েরা

১৯৮৩ সালের ২৫ জুন। সেদিনই ভারতের পুরুষ ক্রিকেটের ইতিহাস পাল্টে দিয়েছিলেন কপিল দেব। লর্ডসে প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের মধ্যে দিয়ে ভারত যে জগতসভায় শ্রেষ্ঠ তারই সূচনা করেছিলেন।
মেয়েরাও করলেন। হয়তো শুধু সময়ের ব্যবধান। ইতিহাসে লেখা থাকবে ২০২৫ সালের ২ নভেম্বর। সেই ইতিহাস এবার নতুন করে লিখলেন হরমনপ্রীত কৌরের মহিলা ক্রিকেট দল। তার নেতৃত্বে প্রথমবার মহিলা বিশ্বকাপের ট্রফি জিতল ভারত।
নবি মুম্বইয়ে ফাইনালে বাধ সেধেছিল বৃষ্টি। তাতেই ঘণ্টাদুয়েক ঠায় অপেক্ষা করা। এরপর অবশ্য আইসিসি মহিলাদের একদিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনালে, রীতিমতো ধুন্ধুমার লড়াই দেখল গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। তাতেই শেষপর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫২ রানে হারিয়ে বিশ্বকাপের স্বপ্ন-জয় ভারতের মেয়েদের।
ফাইনালে জয় পেতে রীতিমতো রেকর্ড গড়তে হতো দক্ষিণ আফ্রিকার। ২৯৯ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে একটা সময় পর্যন্ত প্রোটিয়া অধিনায়ক লরা উলভার্টের ব্যাটে ভর করে জয়ের স্বপ্ন দেখছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু ৪২তম ওভারে দীপ্তি শর্মার বলে আমানজ্যোত কৌরের অবিশ্বাস্য ক্যাচে উলভার্ট (১০১) ফিরতেই ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়। এরপরই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে প্রোটিয়াদের ইনিংস। ২৪৬ রানে অলআউট হয়ে আরও একবার বড় মঞ্চে স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়ে মাঠ ছাড়ল তারা। বল হাতে ৫ উইকেট নিয়ে ভারতের এই ঐতিহাসিক জয়ের অন্যতম রূপকার স্পিনার দীপ্তি শর্মা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট দুটি উইকেট নেন শেফালি বর্মা। তিনি ব্যাট হাতেও ছিলেন অনবদ্য।
এর আগে, টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ভারত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৯৮ রান তুলে ফেলে। ভেজা মাঠের সুবিধা কাজে লাগিয়ে ভারতকে অল্প রানে আটকে রাখার আশায় ফিল্ডিং বেছে নেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক লরা উলভার্ট। কিন্তু তার সেই পরিকল্পনা ভেস্তে দেন দুই ওপেনার স্মৃতি মান্ধানা ও শেফালি বর্মা। ওপেনিং জুটিতেই ১৭.৩ ওভারে ১০৪ রান তুলে ফেলে। ৮টি চারে ৪৫ রান করে মান্ধানা ফিরলেও শেফালি তার তাণ্ডব অব্যাহত রাখেন। ৭টি চার ও ২ ছক্কায় ৮৭ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে শেফালি যখন ফেরেন, দলের রান তখন ১৬৬। এরপর সেমিফাইনালে অজি বধের নায়িকা জেমিমা রডরিগেজ ২৪ রানে ফেরেন। অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর (২০) ও আমানজ্যোত কৌর (১২) দ্রুত ফিরলেও, শেষদিকে হাল ধরেন দীপ্তি শর্মা ও রিচা ঘোষ। রিচা ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩৪ রানের এক ঝড়ো ক্যামিও খেলে আউট হন। দীপ্তি শর্মা ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৫৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে শেষ বলে রান আউট হন। ভারত তোলে ২৯৮ রান।
ভারতের জয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সমাজ মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানিয়ে লেখেন, ‘আইসিসি মহিলা ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৫-এর ফাইনালে ভারতীয় দলের এক অসাধারণ জয়। ফাইনালে তাদের পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাসের পরিচায়ক। টুর্নামেন্ট জুড়ে ব্যতিক্রমী দলগত সংহতি ও দৃঢ়তা দেখিয়েছে ভারত। আমাদের খেলোয়াড়দের অভিনন্দন। এই ঐতিহাসিক জয় ভবিষ্যতে আরও চ্যাম্পিয়নদের খেলাধুলোয় আসতে অনুপ্রাণিত করবে।’ এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। লিখেছেন, ‘‘আজ গোটা জাতি বিশ্বকাপ ফাইনালে আমাদের ‘উওমেন ইন ব্লু’-এর কৃতিত্বে অত্যন্ত গর্বিত। টুর্নামেন্ট জুড়ে তারা যে লড়াই ও কর্তৃত্ব দেখিয়েছে, তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের তরুণীদের জন্য অনুপ্রেরণা হবে’’।
