চোখের জলেই শেষকৃত্য বলিউডের হি-ম্যানের! ৫০ বছর পর বীরুর সঙ্গে বন্ধু বিচ্ছেদের সাক্ষী থাকলেন ‘জয়’! শোকস্তব্ধ সিনেদুনিয়া
শোলে সিনেমার ৫০ বছর এ বার। ৫০ বছর অটুট বন্ধন থাকার পর জয়-বীরুর বন্ধুত্বে যেন ছেদ পড়ল।হল না যে শেষরক্ষা। প্রয়াত বলিউডের ‘হি-ম্যান’। এ যে সিনেমা গল্প নয়, বাস্তব। মুখাগ্নিতে অমিতাভ বচ্চন একা দাঁড়িয়ে দেখলেন বন্ধুর শেষ বিদায়। শ্মশানে পরিবারের পৌঁছান স্ত্রী হেমা মালিনী, মেয়ে এষা দেওল সহ সকলে তো এসেছিলেনই, ছিলেন পৌঁছোন সলমন খান, আমির খান, সঞ্জয় দত্ত, অনিল কাপুর, অক্ষয় কুমারেরা। শাহরুখ বিদেশে থাকায় এসেছিলেন গৌরী খান, শাবানা আজমি, দীপিকা পাড়ুকোন ও রণবীর সিং।
ফিরে এসেছিলেন বাড়ি। সঙ্কট কাটেনি। কাটলও না। ৯০ ছুঁতে পারলেন না ধর্মেন্দ্র। সবাইকে কাঁদিয়ে চিরবিদায় বলিউড কিংবদন্তি ধর্মেন্দ্রর। তাঁর মৃত্যুসংবাদ রটে যাওয়ার পরও, মাসের শুরুর দিকেই ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছিলেন অ্যাম্বুলেন্সে। মুম্বইয়ের জুহুতে নিজের বাড়িতেই সোমবার সকালে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আগামী ৮ ডিসেম্বর ৯০ বছরে পা দিতেন ধর্মেন্দ্র। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯। যদিও এ বারের মৃত্যুর সংবাদও অফিশিয়ালি জানায়নি পরিবার। অনেকেই মনে করছেন, অভিমান থেকেই এই খবর জানায়নি পরিবার।
ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুর খবরে, গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু লেখেন, ‘প্রবীণ অভিনেতা ও প্রাক্তন সাংসদ সদস্য শ্রী ধর্মেন্দ্রজির মৃত্যু ভারতীয় চলচ্চিত্রের জন্য এক বিরাট ক্ষতি। অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা, তিনি তাঁর দশকের দীর্ঘ বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে অসংখ্য স্মরণীয় অভিনয় উপহার করেছেন। ভারতীয় চলচ্চিত্রের একজন উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। তিনি এমন একটি উত্তরাধিকার রেখে গেছেন যা তরুণ প্রজন্মের শিল্পীদের অনুপ্রাণিত করবে। তাঁর পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং ভক্তদের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা।” প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শোকবার্তায় জানান, ধর্মেন্দ্রর প্রয়াণে ভারতীয় সিনেমার এক যুগের অবসান হল।

নরেন্দ্র মোদীর কথায়, ‘ধর্মেন্দ্রজির মৃত্যু ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে এক যুগের অবসান ঘটাল। তিনি ছিলেন এক আইকনিক তারকা, অসাধারণ অভিনেতা, যিনি প্রতিটি চরিত্রে এনে দিতেন বিশেষ আকর্ষণ ও গভীরতা। তাঁর অভিনীত নানা বৈচিত্র্যময় চরিত্র মানুষের হৃদয়ে গভীর ছাপ ফেলেছে। তাঁর সরলতা, নম্রতা এবং আন্তরিকতার জন্যও তিনি সমানভাবে প্রশংসিত ছিলেন। এই শোকের মুহূর্তে তাঁর পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং অসংখ্য ভক্তের প্রতি আমার সমবেদনা। ওঁ শান্তি।’
শোক প্রকাশ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি লেখেন, ‘মুম্বইয়ে কিংবদন্তি অভিনেতা-নায়ক ধর্মেন্দ্রজির মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত। ভারতীয় চলচ্চিত্রে তাঁর অসামান্য অবদান প্রজন্মের পর প্রজন্ম অনুপ্রাণিত করবে। তাঁর পরিবার, ভ্রাতৃত্ববোধ, ভক্ত এবং অনুসারীদের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা। হেমা মালিনীজি, তাঁর পুত্র-কন্যারা এখন তাঁর সমৃদ্ধ উত্তরাধিকার বহন করবেন। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।’

উল্লেখ্য, অনেক দিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন ধর্মেন্দ্র। গত ১১ নভেম্বর তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়েছিল। যদিও সেই খবর সঠিক ছিল না। তারপর থেকে বাড়িতে রেখে তার চিকিৎসা চলছিল। ১৯৩৫ সালে পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় জন্ম নেওয়া ধর্মেন্দ্রর প্রকৃত নাম ধর্মসিং দেওল।
ছোটবেলায় সিনেমার পর্দা ছিল তার কাছে জাদুর জানালা। সেই গ্রাম থেকে, কাদামাখা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তিনিও একদিন বড় পর্দায় আলো ছড়াবেন। ফিল্মফেয়ার ম্যাগাজিনের ‘ট্যালেন্ট কনটেস্ট’-এ জয়ী হন। ১৯৬০ সালে ‘দিল ভি তেরা হাম ভি তেরে’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন ধর্মেন্দ্র। প্রথম সিনেমা মুক্তির পরই নজর কাড়েন। তবে প্রকৃত সাফল্য আসে তারও কয়েক বছর পর। বিশেষ করে ‘শোলা আউর শবনম’ (১৯৬১), ‘বন্দিনী’ (১৯৬৩), ‘ফুল আউর পাথর’ (১৯৬৬) ও ‘সত্যকাম’ (১৯৬৯) সিনেমার মাধ্যমে। ধর্মেন্দ্র অভিনীত বিখ্যাত সিনেমা ‘শোলে’। এছাড়া ‘চুপকে চুপকে’, ‘আনন্দ অর আনন্দ’, ‘ফাগুন’, ‘হকীকত’, ‘দো বাদান’, ‘জীবন মৃত্যু’, ‘দ্য বার্নিং ট্রেন’, ‘রাজা জানি’সহ বহু সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি।
