‘প্রতিটি ফ্রেম আমার হৃদয়ের টুকরো’, ‘পরিণীতা’র পুনরায় মুক্তির খবরে আবেগঘন বিদ্যা
এন্টারটেইনমেন্ট ডেস্ক: দুই দশক পর আবারও বড় পর্দায় ফিরছে এক কালজয়ী প্রেমের উপাখ্যান, ‘পরিণীতা’। প্রয়াত চলচ্চিত্র পরিচালক প্রদীপ সরকার-এর হাতে গড়া এই ছবি। তৈরি হয়েছিল শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস অবলম্বনে। তার ২০তম বর্ষপূর্তিতে আবার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে । আগামী ২৯শে অগাষ্ট থেকে এক সপ্তাহের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে দেখা যাবে নতুনভাবে পুনরুদ্ধার করা এই ছবি।
এই পুনর্মুক্তি কেবল একটি সিনেমার ফিরে আসা নয়, এ এক সম্মিলিত উদযাপন। বিদ্যা বালন-এর বলিউডে অভিষেকের ২০ বছর, বিনোদ চোপড়া ফিল্মস-এর ৫০ বছর এবং ‘পরিণীতা’ ছবির দুই দশক পূর্তি – এই তিনটি মাইলফলকের এক আবেগঘন সেলিব্রেশন এটি।

২০০৫ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবি শুধু বক্স অফিসেই সাফল্য পায়নি, এটি জিতে নিয়েছিল আপামর দর্শকের মন। বিদ্যা বালন, সইফ আলি খান এবং সঞ্জয় দত্ত-এর অনবদ্য অভিনয়। শান্তনু মৈত্র-এর সুর করা হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া গানগুলো আজও বাঙালির মনে তাজা। ‘পিউ বলে…’ অথবা ‘কাস্ত মাজ্জা’—গানগুলো শুধু হিট নয়, মন ছুঁয়েছিল সকল দর্শকদের। পুরনো কলকাতার যে নিঁখুত চিত্রায়ণ প্রদীপ সরকার তাঁর ক্যামেরায় ধরেছিলেন, তা আজও মন্ত্রমুগ্ধ করে তোলে।
প্রযোজক বিধু বিনোদ চোপড়া বললেন , “প্রদীপ সরকার এই ছবির প্রতিটি ফ্রেমে যে আবেগ আর নান্দনিকতা রেখেছিলেন, তা আজও চোখে লেগে থাকে। এই পুনরুদ্ধার শুধু প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নয়, সময়কে ধরে রাখার এক প্রচেষ্টা।”

‘পরিণীতা’র মধ্য দিয়েই বলিউডে পথচলা শুরু হয়েছিল বিদ্যার। এই বিশেষ মুহূর্তে তিনি আবেগে ভাসলেন। বিদ্যা বলেন, “এটা আমার জন্য খুব আবেগঘন একটা মুহূর্ত। ‘পরিণীতা’ থেকেই তো সব শুরু। ছবির প্রতিটি ফ্রেমে আমার হৃদয়ের একটা অংশ মিশে আছে, আর প্রদীপ দা (আমার দাদা) ও বিধু বিনোদ চোপড়ার কাছে আমি চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকব আমাকে বিশ্বাস করার জন্য। একজন অভিনেত্রী হিসেবে আমি আজ যা, তার অনেকটাই এই ছবির অবদান। এত বছর পরেও মানুষ মনে রেখেছে এই ছবিটা, গানগুলো, তাদের মনে কেমন অনুভূতি এনেছিল, সেগুলো মনে রেখেছে। সবাই বলে ছবির প্রতিটি ফ্রেম যেন একটা পেন্টিং… আর এটাই প্রদীপ সরকারের জাদু… তাই আমি আশা করি মানুষ এবং নতুন প্রজন্ম ‘পরিণীতা’-র মাধ্যমে পুরনো দিনের সেই ভালবাসাকে আবার নতুন করে আবিষ্কার করবে।”

সইফ আলি খানও তাঁর স্মৃতির ঝাঁপিতে ডুব দিলেন। তিনি বলেন, “পরিণীতা আমার জন্য এক নতুন দিক খুলে দিয়েছিল। এই ছবি আমাকে নিজের শান্ত, সংযত দিকটা আবিষ্কার করতে শিখিয়েছিল। এর মধ্যে এক অন্যরকম কমনীয়তা, গভীরতা আর পুরনো দিনের এক অদ্ভুত আকর্ষণ ছিল, যা আজকাল বিরল। বিদ্যা, প্রদীপ দা, বিধু বিনোদ চোপড়া, সঞ্জু এবং পুরো টিমের সাথে কাজ করাটা ছিল সত্যিই বিশেষ একটা অভিজ্ঞতা।”

সঞ্জয় দত্ত স্মৃতিচারণ করে বলেন, “পরিণীতা আমার হৃদয়ে সবসময় একটি বিশেষ জায়গা ধরে রাখবে। ‘মুন্নাভাই এম.বি.বি.এস’-এর পর এটি ছিল বিধু বিনোদ চোপড়ার সাথে আমার দ্বিতীয় কাজ। প্রদীপ সরকারের একটি স্বতন্ত্র এবং সংবেদনশীল দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, এবং আমি এমন একটি চরিত্রে অভিনয় করে উপভোগ করেছি যা এত সংযত ও বাস্তবসম্মত ছিল। শুটিংয়ের দারুণ স্মৃতি আছে আমার, আর আমি খুব খুশি যে নতুন প্রজন্ম এখন বড় পর্দায় এটি দেখার সুযোগ পাবে।”
‘পরিণীতা’ কেবল একটি চলচ্চিত্র নয়, এটি কলকাতা এবং বাঙালির প্রতিচ্ছবি। প্রদীপ সরকারের দক্ষ পরিচালনায় সেই পুরনো কলকাতার অলিগলি, তার জমিদারী চালচলন আর প্রেম, তা যেন এক জীবন্ত ক্যানভাস হয়ে উঠেছিল।