বাদল সরকারের নাটক নিয়ে মঞ্চে রজতাভ! ভিতরের ‘বাঘ’টা বলছে, ‘হালুম জিন্দা হ্যায়’

যার গর্জনে কেঁপে ওঠে বুক, দিনশেষে সেই বাঘকেও মাথানত করতে হয় কারও কাছে। কিন্তু এই ‘বাঘ’টি কি আসলে পশু? না কি মানুষের মনে জমে থাকা হিংস্রতা? নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার আগে ঠিক এমনই কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে ‘এ বং পজিটিভ’ নাট্যদল। তাঁদের আগামী প্রযোজনা, কিংবদন্তি বাদল সরকারের লেখা ‘বাঘ’ নাটকের আধুনিক পুনর্নির্মাণ ‘হালুম জিন্দা হ্যায়’। পরিকল্পনায় বাপ্পা।
বাংলা নাট্যজগতে আজও পূজিত হয় বাদল সরকারের নাম। বরাবরই তাঁর নাটকে উঠে এসেছে সমাজের প্রতিষ্ঠিত কাঠামো, ক্ষমতার ভারসাম্য এবং সম্পর্কের নানা পরতের কথা। সেই জায়গায় দাঁড়িয়েই অত্যন্ত চর্চিত ‘বাঘ’ নাটকটি। শিল্পীর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষেই নাট্যদলের এই প্রয়াস। তবে এত বছর পেরিয়েও কতটা প্রাসঙ্গিক এই নাটক?

আডিশনের তরফে যোগাযোগ করা হলে বাপ্পা বলেন, “বাদল সরকারের নাটক সবসময়ের জন্যেই প্রাসঙ্গিক। নাটকের এই কাহিনি সম্পর্কের গল্প বলবে। আর সম্পর্কের কাহিনি আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ঠিক ততটাই বাস্তব যতটা ১৯৫৩-৫৪ সালে ছিল।”
তিনি আরও বলেন, “এই গল্পটির একটা আলাদা মজা আছে। আমাদের মধ্যবিত্ত মানুষের প্রত্যেকের মধ্যেই একটা হিংস্র বাঘ থাকে। সেটা আমাদের ভিতরে জমে থাকা ক্ষোভ, প্রতিবাদ। যা আমরা কখনও উগরে দিই বা কখনও নিজের মধ্যে জমিয়ে রাখি। দিনশেষে আমরা কারও কাছে মাথানত করি। একটা ‘হিপোক্রিসি’ করে চলেছি আমরা নিজেদের সঙ্গে। যা কোনওদিনই ঝেড়ে ফেলতে পারি না। আমাদের মনে হয়েছে গল্পের এই বাঘটি হয়তো সেটা পারে। নিজের কথা ব্যক্ত করতে পারে।”

চমক রয়েছে গল্পের চরিত্রগুলিকে ঘিরেও। নাটকটিতে মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন দুই শক্তিশালী শিল্পী—রজতাভ দত্ত ও বিন্দিয়া ঘোষ। অন্যান্য চরিত্রে সাগর, সুভদীপ, রূপম ও অনুসূয়া।
পরিচালক জানান, ‘হালুম জিন্দা হ্যায়’ বাদল সরকারের ‘বাঘ’ নাটকটির দ্বারা অনুপ্রাণিত হলেও অনেকটাই বদলে দেওয়া হয়েছে। বাপ্পা বলেন, “এটি মূলত পথনাটক ছিল। সেটিকে মঞ্চস্থ করা হয়েছে। সংলাপের দিক থেকে বিশেষ পরিবর্তন না রাখলেও নাটকের দর্শন, বলা যেতে পারে গল্পের মুখ্য চরিত্রে থাকা মধ্যবিত্ত মানুষটির দর্শন আমরা প্রকাশ করেছি নিজের মতো করে। ২০২৫-এ দাঁড়িয়ে সর্বত্র যেখানে অরাজকতা দেখতে হচ্ছে, সেখানে এমন একটি বিষয় নিয়ে কাজ করে মনে হয়েছে, নাটক শেষে দর্শকদের একটি বার্তা পৌঁছবে। ‘হালুম জিন্দা হ্যায়’ কথার অর্থই তাই। মধ্যবিত্ত মানুষটা বলতে চায়, তার ভিতরের বাঘটা এখনও বেঁচে আছে।”
আগামী ২৭ জুলাই ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে প্রথম শো। কতটা আশাবাদী? খানিক হেসে বাপ্পা বলেন, “বাঙালি আসলে আশাবাদী নয় আর। তবে আমাদের নাটকটা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াটা খুব দরকার। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই গল্পে বাঘ একটি মেয়েকে তুলে আনে। যা সমসাময়িক ঘটনার সঙ্গে খুব মিলে যায়। কিন্তু সেই ‘বাঘ’ এর মাধ্যমে কী বার্তা দিতে চাইছে সেটাই দেখার।”