‘নাদা’র স্মৃতি ফেরালেন সোনিকা, ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ভারোত্তোলনে জিতলেন ব্রোঞ্জ!

মিশরের নাদা হাফেজকে মনে আছে? প্যারিস অলিম্পিকে খেলতে নেমেছিলেন ফেন্সিংয়ে। গর্ভে সন্তান, হাতে তরোয়াল! অলিম্পিক শুধু জয়-পরাজয়ের লড়াই নয়, এ যেন জীবনেরও লড়াই শিখিয়েছিলেন নাদা। হ্যাঁ, সত্যি। গর্ভে সাত মাসের সন্তান নিয়েই এই লড়াইটা লড়েছিলেন নাদা। গোটা বিশ্ব অবাক হয়ে গিয়েছিল সেই ঘটনায়।
কিন্তু, এমন ‘নাদা’ তো একটা নয়! মনের জোরে লড়াইয়ে এমন অনেক ‘নাদা’ রয়েছেন গোটা বিশ্বে।দিল্লির কনস্টেবল সোনিকা যাদব সেই কথাটাই যেন প্রমাণ করলেন।তিনি যা করলেন, তা কম কিছু নয়। সোনিকাও ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সেই অবস্থাতেই সর্বভারতীয় পুলিশ ভারোত্তলন প্রতিযোগিতায় ১৪৫ কিলোগ্রাম পর্যন্ত ওজন তুলে ব্রোঞ্জ জেতেন তিনি। ভাবা যায়! সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তিনি অংশ নিলেন অন্ধ্রপ্রদেশে অনুষ্ঠিত ‘অল ইন্ডিয়া পুলিশ ওয়েটলিফটিং ক্লাস্টার ২০২৫–২৬’-এ। এই অবস্থায় ন্যূনতম ওজন তোলাও যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ, তোলা প্রায় সম্ভবই নয়, সেখানে ১৪৫ কেজি ভার তুলে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। জিতেছেন পদকও। প্রতিযোগিতায় স্কোয়াটে ১২৫ কেজি, বেঞ্চ প্রেসে ৮০ কেজি এবং ডেডলিফটে ১৪৫ কেজি তুলে ব্রোঞ্জ পদক জেতেন তিনি। ব্রোঞ্জ জিতে সোনিকা বলেন, ‘আমি চাই না মানুষ গর্ভাবস্থাকে বাধা হিসেবে দেখুক। যদি সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া হয় তবে মহিলারা ফিটনেস এবং তাঁদের স্বপ্ন দুটোকে নিয়েই এগিয়ে যেতে পারেন।’
মে মাসে যখন সোনিকা অন্তঃসত্ত্বা হন তখন অনেকেই আশা করেছিল যে সে তিনি তার প্রশিক্ষণ বন্ধ করে দেবেন । কিন্তু তিনি থামেননি। ফিটনেস এবং খেলাধুলোর প্রতি নিজের আবেগ বজায় রাখার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন সোনিকা। এরপর থেকেই দিন যত এগিয়েছে, তত ঢিলেঢালা পোশাক পরে এসেছেন কসরতে, যাতে কেউ টের না পায়। এমনকি যখন তার স্বামী বেঞ্চ প্রেসের পরে তাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন, তখন কেউ অস্বাভাবিক কিছু সন্দেহ করেনি। ডেড লিফটের পর সত্যিটা জানতে পারলে দর্শকরা করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানান। বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটের নারী অফিসাররা তার চারপাশে জড়ো হয়ে তাকে অভিনন্দন ও প্রশংসায় ভরিয়ে দেন। সোনিকাই জানান. এই ইভেন্টের প্রস্তুতির জন্য, অনলাইনে লুসি মার্টিন্সের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছিলেন। লুসি গর্ভবতী অবস্থায় প্রতিযোগিতার জন্য পরিচিত একজন আন্তর্জাতিক লিফটার। ২০১৪ ব্যাচের কনস্টেবল সোনিকা বর্তমানে কর্মরত আছেন দিল্লি পুলিশের কমিউনিটি পুলিশিং সেলে। সোনিকা জানান, খেলার জগতে তাঁর শুরু হয়েছিল কাবাডি দিয়ে। কিন্তু প্রকৃত শক্তি খুঁজে পান যখন জিমে প্রথম ডাম্বেল হাতে নেন। সেই থেকেই শুরু তাঁর ওয়েটলিফটিংয়ের যাত্রা।
