যুবভারতীতে মেসি-দর্শনে বিতর্ক, তদন্তের রিপোর্টে একাধিক পুলিশ কর্তার বিরুদ্ধে কড়া সিদ্ধান্ত 

0

যুবভারতী কাণ্ডে নজিরবিহীন কড়া পদক্ষেপ করল রাজ্য সরকার। অব্যবস্থা ও গাফিলতির দায়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারকে শো কজ করেছে সরকার। নবান্ন সূত্রে খবর, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই এই শোকজের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার মুকেশ ও ক্রীড়াসচিব রাজেশ কুমার সিনহাকেও শোকজ করা হয়েছে। সাসপেন্ড করা হয়েছে বিধাননগরের ডিসি অনীশ সরকারকে। গোটা ঘটনার আরও বিশদ তদন্তের জন্য পুলিশের একটি বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট তৈরি করে দিয়েছে রাজ্য সরকার।

উল্লেখ্য, গত শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে লিওনেল মেসির সফর ঘিরে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।মেসিকে জটলার মধ্যে দেখতে না পেয়ে দর্শকরা মাঠে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। ভাঙচুর, আগুন লাগানোর ঘটনাও ঘটে। এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক মঞ্চে কলকাতার মাথা কার্যত হেঁট হয়ে যায়। ব্যাপক সমালোচনার মুখে বাংলার মুখ পোড়ে আন্তর্জাতিক আঙিনায়। ঘটনায় ক্ষমা চাইতে হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীম কুমার রায়ের নেতৃত্বে মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিবকে নিয়ে তদন্ত কমিটির গড়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। দু’দিনের মধ্যেই এই কমিটি প্রাথমিক রিপোর্ট পেশ করেছে সরকারের কাছে। ওই কমিটির প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতে পুলিশের সর্বোচ্চ কর্তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছে নবান্ন। সাম্প্রতিক ইতিহাসে পুলিশের ডিজিকে সরকার শোকজ করছে, এমন নজির মনে করতে পারছেন না কেউই।

মঙ্গলবার মুখ্যসচিবের দফতর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তদন্ত কমিটির প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারকে শোকজ করা হয়েছে। সেদিন কেন স্টেডিয়ামে ওই অব্যবস্থা ও গাফিলতি হয়েছিল, কেন অনুষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থা সহ সব পক্ষের সঙ্গে উপযুক্ত সমন্বয় ছিল না, তার কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে ডিজিকে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে এই শোকজের জবাব দিতে হবে তাঁকে। অব্যবস্থা ও গাফিলতির জন্য বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার মুকেশকেও ২৪ ঘন্টার মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলেছে সরকার। কর্তব্যে গাফিলতি ও ওই দিনের ঘটনায় দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় বিধাননগরের ডিসি অনীশ সরকারকে সাসপেন্ড করার নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। এর পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তও শুরু হয়েছে। যতদিন তদন্ত সম্পূর্ণ না হচ্ছে, তিনি সাসপেন্ড থাকবেন। ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ দফতরের প্রধান সচিব রাজেশ কুমার সিনহাকেও গাফিলতি ও অব্যবস্থার জন্য ২৪ ঘন্টার মধ্যে শো-কজের জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। গোটা ঘটনার তদন্তের জন্য পুলিশের একটি সিট তৈরি করে দিয়েছে সরকার। ওই কমিটিতে আছেন রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম, অন্যতম শীর্ষ আইপিএস সুপ্রতিম সরকার, মুরলীধর ও পীযূষ পান্ডে। যুবভারতী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সরকার পদক্ষেপ করেছে। সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনা না করা ও গাফিলতির অভিযোগে স্টেডিয়ামের সিইও পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত ডব্লিউবিসিএস আধিকারিক দেব কুমার নন্দনকে।

যুবভারতীর ঘটনায় প্রথম দিন থেকেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জটলার কারণে হাজার হাজার টাকা খরচ করেও মেসিকে দেখতে পাননি বহু মানুষই। পরে ক্ষিপ্ত জনতাকে শান্ত করতেও ব্যর্থ হয় পুলিশ। ভাঙচুর ও ক্ষয়ক্ষতি চলে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন জুড়ে। এরপরই মূল আয়োজক শতদ্রু দত্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি এখন ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে আছেন। রবিবার সরকারের নিযুক্ত তদন্ত কমিটি মাঠ পরিদর্শন করে। মঙ্গলবার কমিটির সদস্যরা বৈঠকে বসেন। এরপর প্রাথমিক রিপোর্ট দেওয়া হয় সরকারকে।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *