একের পর এক হত্যার হুমকি! ছবি থেকে বাদ, অমিতাভকে মারা এক ঘুষিতেই বদলে ছিল পুনীতের জীবন
এন্টারটেইনমেন্ট ডেস্ক: সালটা ১৯৮২। বলিউড তখন অমিতাভ বচ্চনের জ্বরে আক্রান্ত। তাঁর প্রতিটি ছবিই বক্স অফিসে ইতিহাস তৈরি করছে। ঠিক সেই সময়েই মনমোহন দেশাই পরিচালিত ‘কুলি’ ছবির শুটিং চলছিল বেঙ্গালুরু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। একটি অ্যাকশন দৃশ্যের শুটিংয়ের সময় ঘটে গেল সেই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা, যা শুধু অমিতাভ বচ্চনের জীবনকেই ঝুঁকির মুখে ফেলেনি, বরং তাঁর সহ-অভিনেতা পুনীত ইস্সরের জীবন ও কেরিয়ারকে এক দীর্ঘ অভিশাপের অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছিল।

শুটিং চলছিল একটি অ্যাকশন দৃশ্যের। চিত্রনাট্য অনুযায়ী, পুনীত ইস্সরকে অমিতাভের পেটে একটি নকল ঘুষি মারতে হত এবং অমিতাভকে একটি লোহার টেবিলের ওপর পড়ে যেতে হত। কিন্তু টাইমিংয়ের সামান্য গন্ডগোলে অমিতাভ লাফ দেওয়ার সময় টেবিলের কোনাটি তাঁর তলপেটে সজোরে আঘাত করে। বাইরে থেকে তেমন কিছু বোঝা না গেলেও ভিতরে মারাত্মক আঘাত লাগে। তাঁর প্লীহা (স্প্লিন) ফেটে যায় এবং অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ শুরু হয়।
প্রাথমিকভাবে আঘাতের গভীরতা বোঝা না গেলেও, কয়েকদিন পর অমিতাভের শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি ঘটে এবং তাঁকে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দেশ জুড়ে তখন একটাই প্রার্থনা—যেন ‘বিগ বি’ সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন। কিন্তু এই প্রার্থনার আবহের ঠিক উল্টো দিকে, পুনীত ইস্সরের জীবনে নেমে আসে এক দুঃস্বপ্নের অধ্যায়।

সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে পুনীত জানিয়েছেন, কীভাবে সেই সময় তাঁকে ঘিরে একের পর এক ষড়যন্ত্রতত্ত্ব ছড়িয়েছিল। কারও মতে, তিনি নাকি টাকায় কেনা ঘাতক, আবার কেউ লিখেছিল, ‘এই লোক নাকি ট্রেনের থেকেও দ্রুত দৌড়াতে পারে!’ এসব বানানো গল্পে বিশ্বাস করে মানুষ তাঁকে ঘৃণা করতে শুরু করে। নিয়মিত আসতে থাকে ফোনে প্রাণনাশের হুমকি—”তোকে মেরে ফেলব!”
এই জনরোষের সরাসরি প্রভাব পড়ে তাঁর পেশাগত জীবনেও। নির্মাতারা তাঁকে বাদ দিতে থাকেন। হাতছাড়া হয় প্রায় সাত-আটটি সিনেমা। অনেকেই ভাবতে থাকেন, ‘ও মার্শাল আর্ট জানে, বিপজ্জনক হতে পারে’। ফলে তাঁকে ভিলেন চরিত্রেও নিতে ভয় পেতেন অনেকে।
১৯৮২ থেকে ১৯৮৮ এই ছয় বছর পুনীত কাটান প্রায় বলিউডের বাইরে। নিজের বেঁচে থাকার জন্য শুরু করেন স্পিচ ক্লাস, মার্শাল আর্ট শেখানো, ছোটখাটো ফিল্মে কাজ করা। তবে এই সময়টায় অমিতাভ বচ্চনের ব্যবহার ছিল ব্যতিক্রমী। দুর্ঘটনার পর হাসপাতালে ইস্সরকে পাশে দাঁড় করিয়ে ছবি তোলেন, যা কিছুটা হলেও জনরোষ কমায়।

যখন প্রায় সব দরজা বন্ধ, তখন ১৯৮৮ সালে বি. আর. চোপড়া তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেন। তিনি পুনীতকে তাঁর টিভি সিরিয়াল ‘মহাভারত’-এ দুর্যোধনের চরিত্রের জন্য বেছে নেন। সেই চরিত্রটিই পুনীতের ভাগ্য ফেরায়। তাঁর বলিষ্ঠ চেহারা, গম্ভীর কণ্ঠস্বর এবং অভিনয় দুর্যোধনের চরিত্রটিকে জীবন্ত করে তোলে।
‘কুলি’ দুর্ঘটনার পর দেশবাসী যে পুনীতকে ঘৃণা করেছিল, ‘মহাভারত’-এর পর সেই দর্শকই তাঁর অভিনয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়। দুর্যোধনের চরিত্রটি তাঁর কেরিয়ারে শুধু অক্সিজেনই আনেনি, বরং তাঁকে এক নতুন এবং শক্তিশালী পরিচয় দিয়েছিল।