শ্রোতাদের ভালবাসাতেই অমর ‘কিশোর কুমার’, পাননি কখনও জাতীয় পুরস্কার বা পদ্ম সম্মান
এন্টারটেইনমেন্ট ডেস্ক: তিনি ভারতের রত্ন।তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। তাঁর কণ্ঠে ছিল আবেগ, মজা, পাগলামি আর অপার মাধুর্য। কিশোর কুমার, ভারতীয় সঙ্গীতের ইতিহাসে এক বিস্ময়। ৮ বার শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছেন। একই বিভাগে সর্বাধিক ফিল্মফেয়ার পুরস্কার বিজয়ের রেকর্ড করেছেন। তবু কখনও জাতীয় পুরস্কার হাতে ওঠেনি তাঁর! পাননি ‘পদ্ম’ পুরস্কারও! নানা কারণ, নানা দুর্নীতি। আপোষহীন কিশোর তাই মানুষের মনেই রয়ে গেছেন চিরকাল। বেঁচে থাকলে আজ ৯৬ বছর পূর্ণ করতেন বরেণ্য এই শিল্পী। ভাবা যায়, একজন শিল্পী মোট ২,৭০৩টি গান গেয়েছেন, যার মধ্যে ১১৮৮টি হিন্দি চলচ্চিত্রে, ১৫৬টি বাংলা। কিশোর কুমার বাংলা-হিন্দি ছাড়াও মারাঠি, অসমীয়া, গুজরাটি, কন্নড়, ভোজপুরি, মালায়লাম, ওড়িয়া, উর্দুতেও গান গেয়েছেন। সম্প্রতি ভিকি লালওয়ানিকে ইউটিউবে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কিশোরপুত্র অমিত কুমার জানান, তাঁর বাবা ১৯৬৪ সালের ছবি ‘দূর গগন কি ছাঁও মে’র জন্য জাতীয় পুরস্কারের বিবেচনায় এসেছিলেন। সেই ছবিতে তিনি নিজেই নায়ক, পরিচালক ও সুরকার ছিলেন। তবে ঘুষের প্রস্তাব পেয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি। অমিত কুমারের কথায়, ‘তখন দিল্লি থেকে মন্ত্রণালয়ের একজন ফোন করে বলেন, “হকিকত”, “দোস্তি” আর “দূর গগন কি ছাঁও মে”—এই তিনটি ছবির মধ্য থেকে একটি বেছে নেওয়া হবে পুরস্কারের জন্য। বাবাকে বলা হয়, ‘আপনি যদি কিছু করেন, কিছু দেন, তাহলে আমরা বিষয়টা ঠিক করে নিতে পারি।’ অমিত এরপর বলেন, ‘বাবা সঙ্গে সঙ্গে বিরক্ত হয়ে বলেন, ‘আমার পেছনে কেন লেগেছেন? আমার ছবি ব্যবসায়িক সফলতা পেয়েছে। এসব করতে আমি রাজি নই।’
বাংলা বা হিন্দি গানের কিংবদন্তি কিশোর কুমারের আসল নাম আভাস কুমার গঙ্গোপাধ্যায়। ১৯২৯ সালের ৪ আগস্ট মধ্যপ্রদেশের খান্ডোয়াতে জন্ম।কিশোর কুমারের গোটা পরিবারই বিখ্যাত। আইনজীবী বাবা কুঞ্জলাল গাঙ্গুলি ও মা গৌরি দেবী। এই দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ কিশোর কুমার।কিশোর কুমার শুরুতে অভিনেতা হিসেবে কেরিয়ার গড়তে চাইলেও গায়ক হিসেবেই প্রতিষ্ঠা পান। নানা ঘটনা, রটনা তাঁকে নিয়ে রয়ে গেছে আজও গল্পকথায়। শোনা যায়, লতা মুঙ্গেশকরের অসম্ভব ভক্ত ছিলেন তিনি। তার সম্মানে সব সময় পারিশ্রমিক নিতেন লতার চেয়ে ১ টাকা কম। আবার ১৯৭৫-৭৭ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জারি করা জরুরি অবস্থার বিরোধিতা করে রাষ্ট্রীয় সব অনুষ্ঠান ও মাধ্যম থেকে ব্রাত্য হয়েছিলেন তিনি। একসময় মনোমালিন্যে অমিতাভ বচ্চনের লিপে গান গাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিলেন। যত বড় পরিচালকই হোক না কেন, সম্পূর্ণ পারিশ্রমিক না পাওয়া পর্যন্ত গান রেকর্ডিং করতেন না কিশোর কুমার।ব্যক্তিগত জীবনে চারবার বিয়ে করেছেন কিশোর কুমার। রুমা গুহ ঠাকুরতা (১৯৫০-১৯৫৮), মধুবালা (১৯৬০-১৯৬৯), যোগিতা বালি (১৯৭৫-১৯৭৮) এবং লীনা চন্দভারকর (১৯৮০-১৯৮৭)। জানা যায়, মধুবালাকে বিয়ে করার জন্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন কিশোর কুমার, নাম হয় তখন করিম আবদুল।সরকারি স্বীকৃতি না মিললেও, কিশোর কুমারের কণ্ঠ আজও মানুষের মনের মণিকোঠায়। তিনি যে চিরস্মরণীয়, প্রবাদপ্রতীম, কিংবদন্তি।