মোদীকা আদমি? হ্যাঁ বলাতেই স্ত্রী-মেয়ের সামনেই গুলিতে ঝাঁঝরা বেহালার সমীর গুহ

0


– মোদীকা আদমি?
– হ্যাঁ, মোদীকা আদমি।
ব্যস, আর কোনও কথা নয়। স্ত্রী-মেয়ের সামনেই চোখের সামনেই সরাসরি জঙ্গিদের পরপর গুলি। মুহূর্তে ভূস্বর্গের মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন সমীর গুহ। ভূস্বর্গের বেড়ানো দুঃস্বপ্নের। বিভীষিকার। সব শেষ। স্ত্রী-মেয়েকে ছুটিতে বেড়াতে গিয়ে প্রাণ দিয়ে মাশুল গুনলেন বেহালার বাসিন্দা ৫২ বছরের  কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী সমীর গুহ। পৈশাচিক এই ঘটনার বর্ণনাই এক প্রতিবেশীকে জানিয়েছেন সমীর গুহর মেয়ে শুভাঙ্গী।
নিহত সমীর গুহর শ্যালক সুব্রত ঘোষ জানান, ১৬ তারিখ পরিবার নিয়ে কাশ্মীরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন। খুব খুশিতে ছিলেন মিনি সুইতজারল্যান্ড দেখবেন বলে। খুশিই ডেকে আনল চিরকালের দুঃখ। ঘটনার পর থেকেই কারোর সঙ্গেই যোগযোগ করতে পারছিলেন না বেহালার শ্যালক। উতকণ্ঠা বাড়ছিলই। রাত তিনটেয় আসে এক গাড়ির চালক। ফোনে ভেসে আসে মর্মান্তিক ঘটনার কথা।
ঠিক কী ঘটেছিল সেই সময়? কেমন ছিল পরিস্থিতি? জানা যায় ঘটনার কিছুক্ষণ আগেই ছবি তুলছিলেন তাঁরা। তারপর চেয়ারে বসেছিলেন জিরিয়ে নিতে। হঠাৎই গুলির শব্দ। কী ঘটছে বুঝতে পেরে স্থানীয়রা তাঁদের শুয়ে পড়তে বলছিল। সমীর গুহও স্ত্রী শর্বরী গুহ ও মেয়ে শুভাঙ্গীকে বলেছিলেন…শুয়ে পড়ো , শুয়ে পড়ো ! কিন্তু ততক্ষণে মুখে মাস্ক লাগিয়ে সামনে এসে গিয়েছিল সন্ত্রাসবাদীরা। মুখে বুলি …ইনকো মাত ছোড়না। এরপর সমীর গুহর সঙ্গে ছোট্ট কথোপকথোন। তারপরই ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয় গুলিতে। বুধবারই কাশ্মীর থেকে ফেরার কথা ছিল তাদের। সেই ফিরছেন, তবে ফিরবে সমীর গুহর নিথর দেহ। শ্যালক সুব্রত ঘোষ আডিশনকে জানান,  ‘দিদির সঙ্গে কথা হয়নি সকালে, কথা বলার অবস্থায় দিদি ছিল না, শুধু একবার কাঁদতে কাঁদতে বলল এক লহমায় সব শেষ হয়ে গেল। ড্রাইভার এর থেকেই সব খবর পেয়েছি। আমার দিদি এবং তাঁদের মেয়ে সুস্থ আছে।’ বুধবার সকাল ৭ টার সময় প্রতিবেশী অর্চনা গজেন্দ্রকে ফোন করেন সমীরবাবুর স্ত্রী, শবরী। অর্চনা জানান, ‘খুব কাঁদছিল, বলছিল সব শেষ হয়ে গেছে। তারপরে ওনাদের মেয়ে শুভাঙ্গী ফোন নিয়ে বলেন বাবাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল মোদিকা আদমি হে, বাবা হ্যাঁ বলার সঙ্গে সঙ্গে বাবাকে চোখের সামনে গুলি করে দিল।’  ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর সমীর গুহর বেহালা সখেরবাজারের বাড়িতে এসে উপস্থিত হন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি জানান সরকারের পক্ষ থেকে সব রকম সাহায্য করা হবে নিহতের পরিবারদের। তিনি আশ্বস্ত করেন মৃতদেহ আনার সময় তিনি নিজে উপস্থিত থাকবেন সেখানে। বরাবরই ঘুরতে ভালবাসতেন এই দম্পতি এবং প্রতিবেশী সুত্রে খবর খুব ভালও মানুষ ছিলেন ওনারা। ঘুরতে গিয়ে এভাবে সমীর গুহর চলে যাওয়া কেউ মেনে নিতে পারছেন না বাড়ির পাশাপাশি পুরো পাড়ায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *