দিদার মুখের আদলে দেবী প্রতিমা, আবেগবিহ্বল শন বন্দ্যোপাধ্যায়
এন্টারটেইনমেন্ট ডেস্ক: এই শরৎকাল, এই পুজো মানেই এক উৎসবের মেজাজ, এক নস্টালজিয়া। এ বছর স্বনামধন্য চিত্রপরিচালক ঋত্বিক ঘটকের জন্মশতবর্ষ। বাঙালির মননে তাঁর সৃষ্টি আজও গভীর দাগ কেটে আছে। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দক্ষিণ কলকাতার বেহালা আদর্শ পল্লী এবারের পুজোয় বেছে নিয়েছে তাঁরই কালজয়ী সৃষ্টি — ‘মেঘে ঢাকা তারা’।
সেই দেশভাগের যন্ত্রণা, নীতার সংগ্রাম, “দাদা, আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম…।” বেহালা আদর্শ পল্লীর এ বারের দুই থিম শিল্পী অভীক সেন ও শুভম বন্দ্যোপাধ্যায় সেই ছবি আর তার প্রাসঙ্গিকতাকে এই মণ্ডপে তুলে ধরেছেন বাস্তবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। ৬৯ বছরে পা রাখা বেহালা আদর্শ পল্লীর দেবী দুর্গা এ বার সেজে উঠছেন সুপ্রিয়া দেবীর আদলে, ছবির সেই ‘নীতা’র রূপে। মণ্ডপসজ্জায় টিন, ইট, বাঁশ দিয়ে দেশভাগের সেই হাহাকার ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। দেশভাগের যন্ত্রণা যে আজও সুদান থেকে সিরিয়া বা ইউক্রেনে প্রাসঙ্গিক, সেই কথাও তুলে ধরার চেষ্টা এই মণ্ডপে। এ ভাবেই অতীত আর বর্তমান এখানে মিলেমিশে একাকার।
এই সম্মান শুধু একটি শিল্পকর্ম নয়, এটা একটা স্বীকৃতি। আর সেই স্বীকৃতি ছুঁয়ে গিয়েছে অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবীর পরিবারকেও মায়ের প্রতিমা দেখে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি মেয়ে সোমা চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানালেন, “আমার স্বপ্নের বাইরে যে মাকে এই ভাবে দেখতে পাব। মা চলে গেছে ২০১৮ সালে, আজকে ২০২৫-এ ৭ বছর হয়ে গেল। এত বছর বাদে, মা যে একটা স্বীকৃতি পেল, এত বড় মাপের অভিনেত্রী, দারুণ একটা যে স্বীকৃতি পেয়েছে এটার জন্য আমি খুব খুশি, খুব গর্বিত। আর মা যদি বেঁচে থাকত, তাহলে তো কথাই ছিল না। আমি মনে করি ওপর থেকে নিশ্চয়ই দেখছে।”

পাশে দাঁড়িয়ে নাতি শন বন্দ্যোপাধ্যায়ও আপ্লুত। বললেন, “আমি ভীষণ ভাবে আপ্লুত। আমি বলে বোঝাতে পারছি না আমি এখন কী অনুভব করছি। কারণ এই রকম, এই ভাবে দিদাকে দেখে আমার মনের মধ্যে ভীষণ আনন্দ হচ্ছে। কারণ আমি চেয়েছিলাম যে দিদা আমাদের সকলের মধ্যেই থাকুক। আর এই ভাবেই বেঁচে থাকুক। ওই মানুষটার মতো কাউকে কোনওদিন দেখিনি। আমার কাছে দিদাই সব।” শনের কথায় যেন এক বুক ভরা ভালবাসা আর আক্ষেপ। তিনি চান, আগামী দিনগুলোতে কলকাতায় যা-ই অনুষ্ঠান হোক, তা যেন দিদাকে কেন্দ্র করেই হয়।

শন আরও জানালেন, দিদা চলে যাওয়ার পরেই তাঁর একটি ছবি এঁকেছিলেন— মণ্ডপে থাকা প্রতিমার আদলের মতোই। বললেন, “এই ছবিটার মধ্যে আমি আমার প্রাণ ঢেলে এই ছবিটা এঁকেছি।” যখনই দিদার কথা ওঠে, শন আবেগে আর্দ্র হয়ে পড়েন। আক্ষেপ একটাই— দিদা তাঁর কাজের এত সাফল্য, এত পরিচিতি দেখে যেতে পারলেন না। এই কথা বলতে বলতেই সুপ্রিয়া দেবীর মেয়ে সোমা ও নাতি শন দুজনেই আবেগপ্রবণ হয়ে কেঁদে ফেললেন।
