প্রতীক্ষার ৯ মাস, পৃথিবীকে ৪৫৭৭ বার প্রদক্ষিণ করার পর ফিরলেন সুনীতা

২৮৬ দিন পর। পৃথিবীকে ৪৫৭৭ বার প্রদক্ষিণ করার পর অবশেষে ১৭ ঘণ্টার যাত্রা। প্রহর গোনা থামল বিশ্ববাসীর স্বস্তিতেই। পৃথিবীতে নিরাপদেই ফিরতে পারলেন সুনীতা উইলিয়ামস। সেইসঙ্গে বুচ উইলমোর। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে তাঁদের সঙ্গে ফিরেছেন আরও দুই মহাকাশচারী। নাসার নিক হগ ও রাশিয়ার নভশ্চর আলেকজান্ডার গর্বুনভ। বুধবার ভোর ৩টে ২৭ মিনিট নাগাদ ফ্লোরিডায় সমুদ্রে অবতরণ করে সুনীতাদের মহাকাশযান।মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৩৫ নাগাদ শুরু হয় সুনীতাদের ফেরার যাত্রা। এরপর বুধবার আটলান্টিক মহাসাগরে নিরাপদে অবতরণ করানো হয় তাঁদের। চারটি বিশেষ প্যারাসুটের সাহায্যে ফ্লোরিডার উপকূলে নামে ক্রু ড্রাগন। গোটা ঘটনার লাইভ সম্প্রচার করে নাসা। তাঁদের আনার জন্য পৌঁছে গিয়েছিল মার্কিন নৌসেনা বাহিনীর বোট।

এর পরে মডিউলসহ সুনীতাদের জাহাজের কাছে নিয়ে আসে নৌবাহিনী। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সঙ্গে যেন তারা খাপ খাইয়ে নিতে পারেন, মূলত সেজন্য এক ঘণ্টা সময় নেয় নৌবাহিনীর উদ্ধারকারী জাহাজ।
যখন ক্যাপসুলটি উদ্ধার করার অপারেশন চলছিল, তখন অনেক ডলফিন ক্যাপসুলের চারপাশে সাঁতার কাটছিল। মনে হচ্ছিল ওরাই প্রথম স্বাগত জানাতে হাজির হয় সেখানে।

মহাকাশচারীদের হাইড্রোলিক পদ্ধতিতে তোলা হয় জাহাজে। সেখানে ড্রাগন ক্যাপসুলের দরজা খোলার পরে প্রথমে বেরিয়ে আসেন নিক হগ। তার প্রায় ৫ মিনিট পরে বেরিয়ে আসেন সুনীতা উইলিয়ামস। মহাকাশচারীদের ড্রাগন ক্যাপসুল থেকে বের করার সময় হাসিমুখে হাত নাড়তে দেখা যায় সুনীতাকে। সেখান থেকে তাঁরা রওনা দেন হিউস্টন জনসন স্পেস সেন্টারের উদ্দেশে। সেখানে ক্রু কোয়ার্টারে রাখা হবে তাঁদের। শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা চলবে। ফলে পৃথিবীতে ফিরে এলেও এখনই নিজের পরিবার-বন্ধু-স্বজনদের দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারবেন না মহাকাশচারীরা। আগে ৪৫ দিন ধরে রিহ্যাব চলবে দুই মহাকাশচারীর। যাতে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে পারে মহাকাশচারীরা।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ জুন সুনীতা ও বুচ আইএসএসের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। এটি ছিল বোয়িং স্টারলাইনারের প্রথম ক্রু ফ্লাইটের পরীক্ষামূলক যাত্রা।
তবে বোয়িংয়ের স্টারলাইনার মহাকাশযানের গোলযোগ এবং বিভিন্ন জটিলতার কারণে তাঁদের আট দিনের জায়গায় ৯ মাসেরও বেশি আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে আটকে থাকতে হয়। পরবর্তীতে তা খালি অবস্থায় পৃথিবীতে ফিরে আসে। এই দীর্ঘ দিন মহাকাশে কাটানো কোনো পরিকল্পনাই ছিল না। ফলে পুরো সময় মহাকাশচারীদের ভয়াবহ ও রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। নাসা জানিয়েছে, গত ৯ মাসে ৯০০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ১৫০টি বিষয়ে গবেষণা করা হয়েছে। অবশেষে নাসার গর্বের সঙ্গীরা নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরেছে। পাশাপাশি হোয়াইট হাউসের তরফেও বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, ‘কথা দিয়েছিলাম, কথা রাখলাম।’