রাকেশ শর্মার পর মহাকাশে ইতিহাস গড়তে চলেছেন শুভাংশু শুক্লা, মঙ্গলেই যাত্রা

প্রথম থেকে দ্বিতীয়। মাঝে কেটে গেছে চার দশক। ১৯৮৪ সালের ৩ এপ্রিল মহাকাশে পাড়ি দেন প্রথম ভারতীয় উইং কমান্ডার রাকেশ শর্মা। ২০২৫ সালের ১০ জুন। আরও একবার ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে তামাম ভারতবাসী। মহাকাশে পাড়ি দেবেন ভারতীয় বায়ুসেনার আরও এক অফিসার, গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা।রাকেশ শর্মার মহাকাশযাত্রার চার দশক পর দ্বিতীয় ভারতীয় মহাকাশচারী হবেন শুভাংশু শুক্লা, যিনি পাইলট হিসেবে তাঁর ভূমিকা পালন করবেন।নিঃসন্দেহে তৈরি হবে মহাকাশ পর্বের সোনালি ইতিহাস।

অ্যাক্সিওম-4 (এক্স-4) মিশনের পাইলটের দায়িত্বে থাকবেন শুভাংশু। সব প্রস্তুত সারা। এরমধ্যেই ফ্যালকন-9 রকেট ও ড্রাগন মহাকাশযানকে উত্ক্ষেপন কেন্দ্র 39এ-তে রেডি করাও হয়ে গেছে। মিশনে ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লার সঙ্গে থাকবেন আরও তিন নভোচারী।তাঁরা হলেন হাঙ্গেরির টিবোর কাপু, নাসার প্রাক্তন মহাকাশচারী পেগি হুইটসন এবং পোল্যান্ডের মহাকাশচারী স্লাওস উজনানস্কি-উইশনিভস্কি।আইএসএস-এ যাওয়া চারজনের এই দলটি স্পেসএক্স ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুলে বসবে। এটি স্পেসএক্স ফ্যালকন 9 রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা হবে। এই মিশনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উড়বে ভারতীয় সময় বিকেল পাঁচটা নাগাদ। প্রায় ২৮ ঘন্টা যাত্রা। জানা গেছে, শুক্লা ভারতে মাইক্রোগ্রাভিটি গবেষণার স্বার্থে মহাকাশে সাতটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। কারণ ২০৩৫ সালের মধ্যে ভারতের নিজস্ব মহাকাশ স্টেশন তৈরি বাস্তবায়ন এবং ২০৪৭ সালের মধ্যে চাঁদে মহাকাশচারী পাঠানোর জন্য এএক্স-4 মিশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহাকাশচারীদের এই দলটা মহাকাশ স্টেশনে ১৪ দিন কাটিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসবেন। সব ঠিক থাকলে ভারতীয় জলসীমায় এসে ল্যান্ড করবে তাদের মহাকাশযান।

উত্তর প্রদেশের রাজধানী লখনউয়ের বাসিন্দা গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা। প্রায় ১৮ বছর আগে তিনি ভারতীয় বায়ুসেনায় যোগ দিয়েছিলেন। কার্গিল যুদ্ধই ছিল তাঁর বাহিনীতে যোগদানের অনুপ্রেরণা। ১৯৯৯ সালে, কার্গিল যুদ্ধের সময় গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুক্লার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। কিন্ত, ভারতীয় সেনাদের বীরত্ব ও আত্মত্যাগের বীরগাঁথা পড়তে পড়তেই তিনি ঠিক করে নিয়েছিলেন সশস্ত্র বাহিনীতে যোগ দেবেন। পড়াশোনা করেছেন পুনের জাতীয় প্রতিরক্ষা একাডেমিতে(এনডিএ)। ২০০৬ সালের জুন মাসে তিনি ভারতীয় বিমান বাহিনীর (আইএএফ) ফাইটার উইংয়ে যোগদান করেন। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে গ্রুপ ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতিও পান। ২০১৯ সালে, ইসরো শুক্লাকে মহাকাশচারী প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচন করে।বাকিটা ইতিহাস হতে চলেছে। শুভাংশু শুক্লা হলেন ইসরোর নির্বাচিত সর্বকনিষ্ঠ মহাকাশচারী। তাঁর বয়স মাত্র ৪০ বছর এবং স্পষ্টতই তার সামনে দীর্ঘ কেরিয়ার পড়ে রয়েছে।

সয়ুজ টি-১১-তে চেপে রাকেশ শর্মার ঐতিহাসিক মহাকাশযানের ৪১ বছর পর অ্যাক্সিওম-৪ মিশন শুভাংশু শুক্লার জন্য ভারতের মহাকাশে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই পুরনো স্মৃতি যে আজও অমলিন ভারতীয়দের আবেদের কাছে, হৃদয়ের কাছে, যেখানে মহাকাশ থেকে কথোপকথনের সময় ইন্দিরা গান্ধী রাকেশ শর্মাকে প্রশ্ন করেন, ‘ভারতকে কেমন দেখাচ্ছে ওপর থেকে?’ জবাবে রাকেশ শর্মা সাবলীলভাবে বলে উঠেছিলেন, ‘সারে জাঁহা সে আচ্ছা।’ গোটা দেশ সাদা-কালো টিভির পর্দায় দেখেছিল সেই দৃশ্য।