‘অদৃশ্য শক্তি’তেই কি বাগানে দেবাশিস-সৃঞ্জয়ের হাতে হাত? কোন গোষ্ঠীর আধিপত্য!

0



বাগানে হঠাৎই আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ। কোনও এক ‘অদৃশ্য শক্তি’ সব রাগ গলে জল করে দিল অনায়াসেই। মোহনবাগানে দুই হাত মিলল। দেবাশিস বন্ধু-ভাই সম্বোধনে পাশে বসালেন সৃঞ্জয় বসুকে। লাগাতার দু’মাস ধরে কাদা ছোড়াছুড়ির পর হাত মেলাল মোহনবাগানের শাসক এবং বিরোধী গোষ্ঠী। ঠিক যেমনটা পাঁচদিনের টেস্টের দিন ফয়সালা হবে না ধরে নিয়েই লড়াই থেকে অব্যাহতি নেয় দু’দল, ঠিক তেমনই। আচমকাই সাংবাদিক সম্মেলনের ডাক। সেখানেই দেবাশিস দত্ত-সৃঞ্জয় বসুরা জানিয়ে দিলেন, একসঙ্গে কমিটি তৈরি হল। একসঙ্গেই কাজ হবে। এটাই হবে শ্রেষ্ঠ দল। আগেও বিনা নির্বাচনেই টুটু বসুর ছেড়ে দেওয়া সচিব পদে বসেছিলেন সৃঞ্জয় বসু। ২০২৫ সালে এসেও ‘অদৃশ্য শক্তি’র মধ্যস্থতায় বিনা নির্বাচনেই পেয়ে গেলেন সচিব পদ। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে দেবাশিস দত্ত বললেন, ‘মোহনবাগানে প্রচুর রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক ব্যক্তিতে ভরা। সবাই উদ্যোগ নিয়েছিল। অনেক আগে থেকেই কথাবার্তা চলছিল। যারা মোহনবাগানের ভাল চায়, তাঁরা চেয়েছিল আমরা একজোট হয়ে যাই। আমরা দু’জনেই আলোচনায় বসেছিলাম। তারপর এই সিদ্ধান্ত।’  সোমবার সচিব পদে মনোনয়ন জমা দেন সৃঞ্জয়। এরপর এক টেবিলে বসেন সৃঞ্জয়-দেবাশিস-সৌমিক বসুরা।

পাশে কুণাল ঘোষ। দেবাশিস দত্ত বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে মোহনবাগান ক্লাবের ঐতিহ্য রক্ষা করার চেষ্টা করেছি। তিষ্ঠানের কথা ভেবে পদক্ষেপ নিতে হয়। আলোচনার ভিত্তিতে আমরা এবার সেরা কর্মকর্তার দল তৈরি করেছি।’ যেখানে সচিব পদে সৃঞ্জয় বসু ফিরলেও, নামই থাকল না দেবাশিস দত্তের। তবে তিনি? সহজ হিসেব হয়তো ‘অদৃশ্য শক্তি’ই জানিয়ে দিয়েছেন, নতুন কমিটির পর তিনি হবেন সভাপতি।কিন্তু মোহনবাগানে ভূমিকা কী সভাপতি পদের! তবে কী সান্ত্বনা পুরস্কার! বাগানের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, এত সহজে নাকি রফা করেননি দেবাশিস দত্ত। নতুন কমিটি হওয়ার পর, নতুন করে বদল হতে পারে সংবিধানের। তাতে দায়িত্ব বাড়তে পারে সভাপতির। ঠিক যেমনভাবে, টুটু বসুর জন্যও তৈরি হতে পারে নতুন পদ!  দেবাশিস দত্ত অবশ্য বললেন, ‘টুটু বসু পদে থাকুন বা না থাকুন, উনি চিরকাল থাকবেন।’ দু’গোষ্ঠী হাত মেলালেও, একেবারে তোমার অর্ধেক আমার অর্ধেক ব্যাপারটা তা হয়নি। দাঁড়িপাল্লায় মাপলে কমিটিতে সৃঞ্জয় বসু গোষ্ঠীর দাপটই বেশি থাকবে। সচিব পদের ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই স্বপন (বাবুন) বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন আছেন, তেমনই আছেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভাইপো পিন্টু বিশ্বাস। বাবুন ফুটবল সচিব, পিন্টু অ্যাথলিট সচিব। বাকি ভাগবটরায় মাত্র তিন আসনে দেবাশিস দত্তের লোক। যেখানে সত্যজিৎ চ্যাটার্জী, শাশ্বত বসু ও সন্দীপন ব্যানার্জী রয়েছেন। অন্যদিকে ৬ সচিব পদে সৃঞ্জয় ঘনিষ্ঠরাও। তারমধ্যে সচিব পদের পাশাপাশি অর্থসচিব পদও রয়েছে। কার্যকরী কমিটির বাকি ১১ জনের মধ্যে হিসেব কষলেও ৬ জন সৃঞ্জয়ের শিবিরের বাকি ৫ জন দেবাশিস দত্তের শিবিরের। প্রয়াত অঞ্জন মিত্রকে নিয়ে দু’গোষ্ঠী হইচই করলেও, তাঁর মেয়েকে কোনও পদেই রাখা হয়নি। শুধুমাত্র কার্যকরী সদস্য হিসেবেই রইলেন। এমনকি অঞ্জন ঘনিষ্ঠ প্রবীণ কর্তারাও একে একে বাদ পড়েছেন কমিটি থেকে। দু’পক্ষ হাত মিলিয়ে ফেললেও, এখনই বলা যাচ্ছে না নির্বাচন হবে না। কারণ, ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই নাকি মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তবে যাই হোক, অদৃশ্য শক্তির জাদুকাঠিতে যে নতুন কমিটি হতে চলেছে, তাতে মোহনবাগানে ফুল ফুটলেই ভাল। কাঁটা যে চায় না কোনও মোহন ভক্তই।    

দেখে নিন নতুন যৌথ কমিটিতে যাঁরা

সচিব : সৃঞ্জয় বসু, সহ সচিব : সত্যজিৎ চ্যাটার্জী, ট্রেজারার: সন্দীপন ব্যানার্জী, অর্থসচিব : সুরজিৎ বসু, মাঠ সচিব:  শাশ্বত বসু, ফুটবল সচিব : স্বপন ব্যানার্জী, ক্রিকেট সচিব: সম্রাট ভৌমিক, হকি সচিব : শ্যামল মিত্র, অ্যাথলিট সচিব : পিন্টু বিশ্বাস, টেনিস সচিব : সিদ্ধার্থ রায়, যুব ফুটবল সচিব: শিল্টন পাল

কার্যকরী সদস্য: মুকুল সিনহা, সোহিনী মিত্র চৌবে, সোমেশ্বর বাগুই, কাশীনাথ ঘোষ, দেবপ্রসাদ মুখার্জী, সুদীপ্ত ঘোষ, দেবজ্যোতি বসু, রঞ্জন বসু, পার্থজিৎ দাস, সঞ্জয় মজুমদার, অনুপম সাহু।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *